হিজাব vs রোমিও
পর্ব - ১
রিষ্ট ওয়াচের দিকে চেয়ে লাইলী চমকে
উঠল। তারপর বই খাতা নিয়ে ইতিহাসের ক্লাস করার জন্য পা বাড়াল। সে লাইব্রেরীতে বসে
একটা নোট লিখছিল। তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে এসে সিড়িতে উঠার সময় সেলিমের সঙ্গে ধাক্কা
লেগে। হাত থেকে বই-খাতগুলো নিচে ছড়িয়ে পড়ল। ইয়া আল্লাহ একি হল বলে লাইলী কি
করবে ভেবে ঠিক করতে না পেরে সেলিমের দীর্ঘ বলিষ্ঠ স্বাস্থ্য ও পৌরষদীপ্ত চেহারার
দিকে লজ্জামিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব কিছু ভুলে গেল। আর সেলিমও তার দিকে চেয়ে খুব অবাক হল। এতরূপ যে কোন মেয়ের
থাকতে পারে, সে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। লাইলীর
টকটকে ফর্সা গোলগাল মুখটা শুধু দেখা যাচ্ছে। কারণ সে বোরখা পরে রয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ পর লাইলী নিজেকে সামলে নিয়ে বই-খাতা কুড়াতে
লাগল।
এতক্ষণে সেলিমের খেয়াল হল, তারও তো অন্যায় হয়েছে। সে তখন তাড়াতাড়ি করে দু-একটা বই
তুলে তার হাতে দিতে গেলে আবার চোখাচোখি হয়ে গেল, আর দুজনের অজান্তে হাতে হাত ঠেকে গেল।
লাইলী চমকে উঠ ‘হায় আল্লাহ বলে বইসহ নিজের হাতটা টেনে নিল। সেলিম
মৃদুকণ্ঠে বলল, অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য মাফ চাইছি।
লাইলী তার দিকে কয়েক সেকেণ্ড চেয়ে থেকে সিড়িতে উঠতে আরম্ভ করল। সেলিম বলল, শুনুন। লাইলী যেতে যেতে ঘুরে শুধু একবার তাকিয়ে দ্রুত চলে
গেল।
সেলিম তার চলে যাওয়া দেখল। তারপর
চিন্তিত মনে লাইব্রেরীতে ঢুকে চেয়ারে বসে ভাবল, সে এতদিন ভার্সিটিতে পড়ছে, কই এই মেয়েটিকে
তো এর আগে কোনদিন দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না ? অবশ্য সে বোরখা পরা মেয়েদের মোটেই পছন্দ করে না। সেই জন্য হয়তো ওকে দেখেনি।
ওদের সোসাইটিতে কত সুন্দরী মেয়ে আছে। তাদের সঙ্গে এই মেয়ের কোন তুলনা হয় না। এত
নিখুত সুন্দরী মেয়ে এই প্রথম সে দেখল। সেলিমের মনে হল, মেয়েটি যেন একটা ফুটন্ত গোলাপ। তার লম্বা পটলচেরা চোখের
উপর মিশমিশে কালো ভ্রু-দুটো ঠিক একজোড়া ভ্রমর, আর কম্পিত পাপড়িগুলো তাদের ডানা। ওর মায়াবী চোখের কথা মনে করে সেলিম নিজেকে
আবার হারিয়ে ফেলল। কতক্ষণ কেটে গেছে তার খেয়াল নেই। বন্ধু রেজাউল এসে যখন বলল, কিরে একটা বই আনতে এত দেরি হয় বুঝি? তারপর তার দিকে ভালো করে তাকিয়ে আবার বলল, তুই বসে বসে এত গভীরভাবে কি ভাবছিস বলতো।সেলিম নিজেকে ফিরে পেয়ে বলল, একটা এ্যাকসিডেন্ট করে ফেলেছি। এ্যাকসিডেনট করেছিস? কই দেখি কোথায় লেগেছে? কি করে করলি?
ইচ্ছা করে করিনি, হঠাং হয়ে গেছে। তবে শরীরের কোনো জায়গায় ব্যথা পাইনি, পেয়েছি এখানে বলে নিজের বুকে হাত রাখল।
রেজাউল কিছু বুঝতে না পেরে বলল, হেঁয়ালি রেখে আসল কথা বল। বলব দোস্ত বলব, তবে এখন নয়। আগে ব্যথাটা সামলাতে দে, তারপর বুঝলি ?
ঠিক আছে তাই বলিস। এখন যে বইটার
জন্য এসেছিলি সেটা নিয়ে চল, ওরা সবাই অপেক্ষা
করছে। সেলিম আলমারী থেকে স্ট্যাটিসটিকস এর
একটা বই নিয়ে দুজনে ক্লাসে রওয়ানা দিল। সেদিন লেকচারার এ্যাবসেন্ট থাকায় ওরা
কয়েকজন ক্লাসে বসে গল্প করছিল। কবির নামে সেলিমের আর এক বন্ধু কাছে এসে বলল, এই অঙ্কের উত্তরটা মিলছে না কেন বলতে পারিস ?
তার প্রশ্ন শুনে আরও কয়েকজন ছেলে
এসে অঙ্কটা দেখে বলল, আমরাও পারিনি।
সেলিম ততক্ষণ অঙ্কটা কষতে আরম্ভ করে দিয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যে অঙ্কটা শেষ করে
উত্তর মিলিয়ে দিল।
সকলে দেখে বলল, তুই গোঁজামিল দিয়ে করেছিস। ঐ ফরমূলা আমরা কোথাও পাইনি।
সেলিম বলল, অমুক বইতে ফরমুলাটা আছে। দাঁড়া, বইটা লাইব্রেরী থেকে নিয়ে আসি। বইটা তাড়াতাড়ি করে আনার
জন্য তিন তলা থেকে নামার সময় নিচের তলার সিড়ির শেষ ধাপে লাইলীর সঙ্গে ধাক্কা
লাগে। রেজাউলের সঙ্গে বইটা নিয়ে এসে ক্লাসের সবাইকে ফরমূলাটা দেখল। সেলিম স্ট্যাটিসটিকস-এ অনার্স পড়ে। এটা তার ফাইনাল ইয়ার।
ক্লাসের মধ্যে সেরা ছাত্র। বিরাট বড়লোকের ছেলে। গুলশানে নিজেদের বাড়ি। তাদের কয়েকটা
বীজনেস। তারা দুই ভাই এক বোন। সেলিমই বড়। দুবছরের ছোট আরিফ। বোন রুবীনা সকলের ছোট।
সে ক্লাস টেনে পড়ে। ওদের ফ্যামিলী খুব আন্টামডার্ণ। শুধু নামে মুসলমান। ধর্মের
আইন-কানুন মেনে চলা তো দুরের কথা, ধর্ম কি জিনিষ তাই
হয়তো জানে না। পিতা হাসেম সাহেব গত বছর থম্বোসিসে মারা গেছেন। তিনি বীজনেস মেনেজমেন্টে বিদেশ
থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসে প্রথমে একটা কটন মিলের ম্যানেজার ছিলেন। হাসেম সাহেব একজন
সুদর্শন পুরুষ। কর্মদক্ষতায় মালিকের প্রিয়পাত্র হয়ে তার একমাত্র কনাকে বিয়ে
করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেন। পরে নিজের চেষ্টায় আরও দু-তিন রকমের ব্যবসা করে
উন্নতির চরম শিখরে উঠেন। বন্ধু বান্ধবদের তিনি বলতেন, ধর্ম মেনে চললে আর্থিক উন্নতি করা যায় না। জীবনে আর্থিক
উন্নতি করতে হলে ধর্ম ও মৃত্যু চিন্তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়। অর্থাৎ ভুলে যেতে
হবে। আর আল্লাহকে পেতে হলে মৃত্যুকে সামনে রেখে ধর্মের আইন মেনে চলতে হবে। তিনি
আরও বলতেন, যৌবনে অর্থ উপার্জন কর এবং ভোগ কর।
তারপর বার্ধক্যে ধর্মের কাজ কর। তার এই মতবাদ যে ভুল, তিনি নিজেই তার প্রমাণ। প্রথমটায় কৃতকার্য হলেও অকালে
মৃত্যু হওয়ায় দ্বিতীয়টায় ফেল করেন। সেলিমের যখন ইন্টারমিডিয়েটের সেকেণ্ড ইয়ার তখন আরিফ ম্যাট্রিকে সব বিষয়ে
লেটার পেয়ে পাশ করল। পরীক্ষার পর কিছুদিন তবলীগ জামাতের সঙ্গে ঘুরে নিয়মিত নামায
পড়তে লাগল। এইসব দেখে 'পিতা হাসেম সাহেব
মাঝে মাঝে রাগারাগী করতেন। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্ট আউট হওয়ার পর যখন সে জানাল, মাদ্রাসায় ভর্তি হবে তখন তিনি রাগে ফেটে পড়লেন। ভীষণ
বকাবকি করার পর বললেন, ঐ ফকিরি বিদ্যা
পড়ে ভবিষ্যতে পেটে ভাত জুটবে না। সব সময় পরের দয়ার উপর নির্ভর করে থাকতে হবে।
ওসব খেয়াল ছেড়ে দাও, আর এখন তোমাকে ' নামায রোজাও' করতে হবে না। ঐ সব বুড়ো বয়সের ব্যাপার। মা সোহানা বেগমও অনেক করে বোঝালেন।
কিন্তু কারোর কথায় কিছু হল না। একদিন সকালে আরিফকে…………..
২য় পর্ব পেতে কমেন্ট করুন ।
বি:
দ্র: আপনি যদি এইরকম আর্টিকেল লিখে টাকা আয় করতে চান তাহলে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটের
অ্যাডমিনের সাথে যোগাযোগ করুন। ফেসবুকে যুক্ত হওয়ার জন্য নিচের ছবিতে টাচ করুন।
0 Comments